
| রবিবার, ২৬ মে ২০১৯ | 1115 বার পঠিত | প্রিন্ট
আখাউড়া প্রতিনিধি#
সাজেদা বেগম এর ক্ষেতপাতর কিছুই নেই। বসত বাড়িটি তার একমাত্র ভরসা। বাড়িটিকে ঘিরেই আয়ের উৎস ছিল তার। ঐ বাড়িতে আম,কাঁঠাল সহ অন্যান্য ফসল ফলত। ঐসব ফলমূল বাজারে বিক্রয় করে সাজেদা বেগম তার তিন মেয়ে নিয়ে ভালই চালাচ্ছিলেন সংসার।
আখাউড়া উপজেলার তুলাইশিমুল গ্রামের মাজেদ মিয়ার স্ত্রী তিনি। কয়েক বছর আগে দিনমুজুর স্বামী যান। স্বামীর রেখে যাওয়া উপজেলার ফতেহপুর মৌজায় ১০ শতকের একটি বাড়ি। ঐ পুরো বসত বাড়ীটি আখাউড়া –আগরতলা রেলপতের জন্য অধিগ্রজণ করায় সাজেদা বেগম তার মেয়েদের নিয়ে এখন বাস্তহারা হয়ে গেছেন।
এই বিধবা বলেন, স্বামীর বসত বাড়িটা ছাইড়া দিতে অয়ছে। ডিসি অফিস থেকে ক্ষতিপূরণ ১৮ লাখ ট্যাহা পাইছি। ফতেহপুর মৌজায় বাড়ির দাম অনেক বেশি। এই ট্যাহা দিয়া জায়গা কিনতে পারিনাই। তাই স্বামীর গ্রেরাম ছাইড়া কোন মতো দিন যাপন করছি আখাউড়া শহরে ভাড়া বাড়ীতে। সাজেদা বেগমের মতো একই গ্রামের মোঃ সাদেক মৃধা। তিনি ঘর বাড়ি ও পুকুর ভূমি হারিয়ে অন্যস্থানে ভাড়া থাকছেন। তার পুরো ভাড়ি সহ ১৩ শতক ভূমি গেছে আখাউড়া-আগরতলা রেলপথে। ঐ ভূমির বিপরীতে পেয়েছে ৩৬ লাখ টাকা। সাদেক মৃধা বলেন, যে টাকা পেয়েছি এই টাকা দিয়ে এলাকার বাড়ীর জায়গা কিনতে পারছিনা।
আখাউড়া- আগরতলা রেলপথের জন্য বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তুলাইশিমুল গ্রামের মো. বাবুল ভূইয়ার পরিবার। তাদের ফতেহ পুর মৌজায় ৯৫ শতক বাড়ি, পুকুর ও নাল ভূমি গেছে রেল পথ নির্মাণে। এই পযন্ত ক্ষীতপূরণ পেয়েছেন ৯৭ লাখ টাকা। বাইরে ঐভূমি বিক্রি করেলে পেতেন প্রায় ৪ কোটি টাকার মতো পেতেন বলে জানান বাবুল ভূইয়া। তিনি বলেন গ্রামের উপর দিয়ে রেলপথ গেছে যা আমাদের বুক ছিরে গেছে। এই রেললাইন আমাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। এ রেলে পথ যা জমি আমাদের থেকে নিয়ে গেছে তার থেকে ২শ’ ফুট উত্তরের একটি নাল ভূমি ২ লাখ টাকা শতক বিক্রি হয়েছে। আর সরকার আমাদের দিল কি? তিনি বলেন, প্রায় ১ বছর পূর্বে দিয়েছে ক্ষতিপূরণ টাকা আর এখন শোনছি ২য় ধাপে পূর্ণবাসন সহায়তা করবে। নির্দিষ্ট করে কেউ বলছে না কত টাকা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সাব রেজিষ্টি অফিসে সরকার নির্ধারিত বাজার মূল্যের ৫ থেকে ৭ গুন বেশি জমি জায়গা জমি কেনা বেছা হয়। কিন্তু দলিল রেজিস্ট্রিরী করার সময় সরকারি বাজার মূল্যে রেজিস্ট্রেরী করেন এ অঞ্চলের মানুষ। এ কারণে এ আমরা ঠকেছি। কম ক্ষতি হয়নি গোপালপুরের মাজিদুল হক ভূইয়া মনিয়ন্দের ইকবালদের। মাজিদুল হক ভূইয়া বলেন, গোপালপুর ও মনিয়ন্দ মৌজায় আমাদের চার ভাইয়ের ২ একর ৪০ শতক জায়গা গেছে রেলে। কোন কোন ক্ষেতের মাঝ দিয়ে গেছে রেলপথ। এ মৌজা আমাদের বেশি ক্ষতি হয়েছে।পড়ে জমির টুবরোগুলো কোন কাজে আসছে না। ইকবাল মিয়া বলেন, মনিয়ন্দ মৌজায় আমদের বিল্ডিং সহ ৪টি ঘর গেছে। আমাদের অনেক জমির মাঝামাঝি দিয়ে রেলপথ যাওয়ায় কোন কোন জমি ৪/৫ শতক করে বেশ কয়েকটি টুকরো হয়ে গেছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশের মাঝে অান্ত দেশীয় রেল সংযোগের উদ্যেগ নেয়। বাংলাদেশের আখাউড়া গঙ্গাসাগর, মনিয়ন্দ, , গোপাল পুর, ফতেহপুর, খারকোট, বড় গাঙ্গাইল ও শিবনগর মৌজায় ৫৬,৩৬ একর ভূমি।
জানাগেছে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগে ১৯৮২ সালের স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহন অধ্যাদেশের কারণে আখাউড়া ভূমির মালিকদের কপাল পুড়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দেড়গুন হারে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ভূমির মালিকরা। যা সরকারি নির্ধারিত বাজার মূল্যের ওপর ভিত্তির দেড়গুন হারে অর্থ দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ঐসব অঞ্চলে সরকারি বাজার মূল্যের বাইরে নাল ও পুকুর ভূমি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা প্রতি শতক ও বাড়ী ভূমি আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার ঊর্ধ্বে প্রতি শতক ভূমি বেচাকেনা হচ্ছে। এতে ভূমির মালিকরা বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ করলে কোন ফল পাইনি। এতে ভূমির মালিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রাণের সম্পত্তি হারিয়েও তারা ন্যায্য মূল্যে পাচ্ছে না। অপরদিকে রেলওয়ে থেকে বলা হয়েছে ২য় ধাপে রেলওয়ের পক্ষথেকে পূর্নবাসন নীতিমালায় ভূমির মালিকদের পূর্ণবাসন সহায়তা দেওয়া হবে। এর কাজ চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্রে জানাগেছে, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয় ২০১৬-১৭ইং অর্থবছরে। ১৯৮২ সালের স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহন ও হুকুম দখল অধ্যাদেশের আওতায় ও ১ বছর পূর্বের উপজেলার সাব রেজিস্ট্রিরী অফিসের নির্ধারিত বাজার মূল্যে যাচাই করে ভূমির ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে দেড়গুন হারে অর্থ। যে সব ভুমিতে ঘরবাড়ি, স্থাপনা, গাছপালা রয়েছে সেগুলোরও দেড়গুণ হারের টাকা দেওয়া হয়েছে।ইতিমধ্যেই ৮০ ভাগ ভূমির অধিগ্রহণ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।বাকি ২০ ভাগ মামলা মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন কারণে অসম্পূর্ণ রয়েছে অধিগ্রহণের কার্যক্রম। ঐ২০ ভাগ দখলে নিয়েছেন রেলকর্তৃপক্ষ। ভূমির জটিলতা শেষে ভূমির মালিকদের তাদের প্রাপ্ত দেওয়া হবে বলে জানাগেছে।
আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ভারত ও বাংলাদেশ অংশের প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সর মাধ্যমে নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।
২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েল গেজ রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের মাঝে সমযোতা স্মারক স্বাক্ষ্যরিত হয়। প্রকল্পটি অর্থায়ন করেছে ভারত সরকারের অনুদান ও বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পটি নির্মাণ কাজ করেছে ভারতের দিল্লীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ট্রেক্সাম্যাকো রেল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লি:
Posted ১২:২৫ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৬ মে ২০১৯
Akhaurar Alo 24 | মোঃ সাইফুল ইসলাম
আর্কাইভ
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ||||||
২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ |
৯ | ১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ |
১৬ | ১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ |
২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ |
৩০ | ৩১ |