
| বুধবার, ০১ মে ২০১৯ | 504 বার পঠিত | প্রিন্ট
মো:সাইফুল ইসলাম#
আজ মহান মে দিবস। বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে স্বপ্ন দেখার দিন আজ। শ্রমজীবী মানুষের অনুপ্রেরণার দিন। মুক্তির দিন। বিশ্বের কোটি কোটি শ্রমজীবি মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ের দিন। আজ শ্রমিকের বুকের রক্ত দিয়ে অধিকার আদায়ের গৌরবময় দিন।
সারাবিশ্বে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ভাবে এই মহান দিবসটি প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে শ্রমিকদের এক বিশাল আত্মত্যাগের ইতিহাস।
আজ থেকে ১৩৩ বছর আগে, ১৮৮৬ সালের পহেলা মে অত্যাচার আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকরা সব কল-কারখানায় শ্রমিক ধর্মঘটের ডাক দেন। শ্রমের নায্য মজুরি এবং দৈনিক অনধিক আট ঘণ্টা কাজের ন্যায়সংগত অধিকার দাবিতে শ্রমিকরা সেদিন কাজ বন্ধ করে রাজপথে আন্দোলনে নামেন।
লাল ঝাণ্ডা হাতে সেদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের সামনে শ্রমিকা বিক্ষোভ করেন। শ্রমিকদের ওই বিক্ষোভ সেদিন এক বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রায় তিন লাখ শ্রমিকের এই বিক্ষোভে, একপর্যায়ে পুলিশ বিনা উস্কানিতে নির্বিচারে গুলি চালায়। পুলিশের ওই গুলিতে ১১ জন শ্রমিক নিহত হন। আহত ও গ্রেফতার হন আরো অনেক শ্রমিক। পরবর্তীতে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের মধ্য থেকে ৬ জনকে আন্দোলনে অংশ নেয়ার অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কারাগারে বন্দিদশায় এক শ্রমিক নেতা আত্মহনন করেন। এতে বিক্ষোভ প্রকট আকার ধারণ করে।
হে মার্কেটের শ্রমিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। শ্রমিকদের সঙ্গে সেই আন্দোলনে সাধারণ ছাত্র-জনতাও সামিল হয়। ফলে বিশ্বজুড়ে তীব্র শ্রমিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। হে মার্কেটের সামনে শ্রমিকদের সেই আত্মত্যাগ, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে যে গতি ও অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করে, তারই সোনালি ফসল হিসেবে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টা প্রতিষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিকদের আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। আর শ্রমিকদের রক্তে রাঙ্গানো এই দিনটি বিশ্বজুড়ে ‘মে দিবস’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে শিকাগোর শ্রমিকদের জীবনদান এবং আন্দোলনের স্বীকৃতি দিতে পহেলা মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এর পরের বছর ১৮৯০ সাল থেকে পহেলা মে বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ পালিত হচ্ছে।
১৯১৯ সালের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও কনভেনশন অনুসারে বিশ্বের প্রায় সব দেশে আইন করে এই দিবসটি কার্যকর করে। বাংলাদেশও আইএলওর এই কনভেনশন অনুসমর্থন করে। ফলে সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যদায় দিবসটি পালন করে। বাংলাদেশ সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এই মহান মে দিবস পালন করে।
মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে। বন্ধ থাকে কল-কারখানা। এদিন শ্রমিকরা বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মে দিবসের র্যালিতে অংশ নেন। প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্টনিক মিডিয়া মে দিবস উপলক্ষে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ বা বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দেন। বিশিষ্টজনরা বিবৃতি দেন, নানাভাবে দিবসটি তাৎপর্য তুলে ধরে শ্রমিক অধিকারের পক্ষে সোচ্চার হন।
কিন্তু বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে গেলেও, শ্রমিকদের ন্যায়সংগত অধিকার এখনো সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। প্রবৃদ্ধি বাড়লেও শ্রমিকের আয়ের ন্যায্য অংশ তারা পাচ্ছেন না। অতিরিক্ত সময় কাজ করেও শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে।
দেশের প্রধান প্রধান শ্রম খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের শ্রম আইনে মে দিবসের মানদণ্ড সমর্থন করা হলেও, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মানছেন না। এখনও শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মজুরি বৈষমের স্বীকার হচ্ছেন। ফলে শ্রম আইনে আট ঘণ্টা কাজ, বিশ্রাম, ছুটি ও ন্যায্য মজুরীসহ অন্য অধিকারগুলো এখনো অনেক শ্রমিকের কাছে স্বপ্নের মতো। আর সে কারণে ১৩৩ বছর আগে শ্রমিকদের রক্তে প্রতিষ্ঠিত দাবি আজও অপূর্ণ রয়ে গেছে।
তাই মে দিবস শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, শ্রমিকদের যথাযথ মর্যদা ও প্রাপ্য এবং প্রয়োজনীয় ও আইনসংগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিৎ হলেই কেবল মে দিবসের স্বার্থকতা আসবে বলে শ্রমিক অধিকার সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন।
Posted ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০১ মে ২০১৯
Akhaurar Alo 24 | মোঃ সাইফুল ইসলাম