ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
অনলাইনে টিকিট কাটা সম্ভব হয়ে উঠেনি- তাই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ‘চুক্তিতে’ ট্রেনে উঠেন। আর এতে বিপাকে পড়েন ছয় যাত্রী। বিনা টিকিটে চড়ায় তাদের জরিমানা হওয়ার পাশাপাশি গন্তব্য স্টেশনের অনেক আগেই নেমে যেতে হয়। আর্থিক ও যাতায়ত সমস্যায় তাদেরকে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।
সোমবার বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই ট্রেন যাত্রীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে আটকা ছিলেন। ওই ছয় যাত্রী চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়েন।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের উত্তর দিকে যুবক বয়সি ওই ছয় যাত্রীসহ রেলওয়ে পুলিশ, নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা এসব বিষয় নিয়েই কথা বলছেন। ওই যাত্রীদেরকে কিভাবে চট্টগ্রাম পাঠানো যায় এ নিয়েই ছিলো আলোচনা।
হবিগঞ্জের আজমীরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা গ্রামের সুমন, নূর হোসেন, মো. হোসাইন, সাকিব আহমেদ, জাহিদুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রামে কাজে যোগ দিতে তারা একসঙ্গে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশনে আসেন। অনলাইনে টিকিট কাটা সম্ভব না হওয়ায় স্টেশনে এসে জালাল নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে জনপ্রতি ৭০০ টাকায় ওই ট্রেনে চট্টগ্রাম যাওয়ার চুক্তি করেন। পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন আসার পর জালাল উদ্দিন নামে ওই ব্যক্তি ট্রেনে দায়িত্বরত রেলওয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য মো. রাকিব উদ্দিনের কাছে তাদেরকে বুঝিয়ে দেন। রাকিব উদ্দিন জানান, চট্টগ্রাম পর্যন্ত তাদেরকে টিকিট ছাড়াই নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। এরই মধ্যে ট্রেনটি আখাউড়া স্টেশনে আসার পর টিটিই এসে টিকিট দেখতে চান। টিকিট না পেয়ে তাদেরকে ট্রেন থেকে নামিয়ে প্রত্যেককে সাতশ’ টাকা করে জরিমানা করেন। এরই মধ্যে ওই যাত্রীরা বিষয়টি সবাইকে খুলে বলে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিরাপত্তা বাহিনীর ওই সদস্যই যাত্রীদের জরিমানা পরিশোধ করেন। পরে ওই যাত্রীদেরকে আরো পাঁচশ’ টাকা দেন চলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ট্রেন না থাকা ও আর্থিক সংকটের কথা বলে ওই যাত্রীরা যেতে চাচ্ছিলেন না। এরই মধ্যে আখাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন এসে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। বিকেল পাঁচটার দিকে ওই যাত্রীদেরকে নিরাপত্তা বাহিনীর আখাউড়া চৌকির দিয়ে নেয়া হয়।
নিরাপত্তা বাহিনীতে সিলেটে কর্মরত মো. রাকিব উদ্দিন জানান, স্টেশনের এক লোক তাদেরকে তুলে দেন। এভাবে তাদেরকে আনাটা তার ঠিক হয় নি। এক বছর হলো চাকরি বিধায় এত কিছু বুঝে উঠছেন না। যে কারণে এখন তিনি খেসরাত দিচ্ছেন। জরিমানার টাকা দেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে চট্টগ্রামে যাওয়ার ব্যবস্থাও করা দেয়া হচ্ছে।
আখাউড়া রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এস.আই মো. আমিরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি জেনে তিনি সমাধানের চেষ্টা করি। পার্সেল ট্রেনে থাকা সংশ্লিষ্টদেরকে অনুরোধ করে ওই যাত্রীদেরকে চট্টগ্রাম পাঠানো যায় কি-নাচষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি রাকিব উদ্দিনের কর্মস্থলের সংশ্লিষ্টদেরকে অবহিত করা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতিতে ট্রেনে চলাচলে বেশ কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। ট্রেনে প্রতি দুই সিটের বিপরীতে একজনের টিকিট দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মানতে হচ্ছে আরো কিছু স্বাস্থ্য বিধি। যে কারণে ট্রেন যাত্রাবিরতি দেয় এমন স্টেশনে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।