মো:সাইফুল ইসলাম#
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও ৭১ সালে পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের এদেশীয় দোসরদের হাতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিকামী জনতার গণকবর এখনও অযত্ন, অবহেলিত ও অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার সেনারবাদী গ্রামের ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা দক্ষিণ রামনগর সীমান্তের নো-ম্যানসল্যান্ডে (সীমান্তের শূন্যরেখায়) ২৫০ শহীদের গণকবরটির অবস্থান
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা নোম্যানসল্যান্ডের ওই গণকবরে অনাদরে যুগ যুগ ধরে শুয়ে আছেন অন্তত ২৫০ মুক্তিযোদ্ধা। ৭১’মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার জিবি হাসপাতালে যেসব যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মারা যেতেন তাদের এখানে এনে দাফন করা হতো। তাছাড়াও পাকিস্তানিদের গুলিতে নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের ওখানটায় দাফন করা হয়। কোনো কোনো কবরে তিন-চারজনকেও কবর দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ‘২০২১/আই-এস’ সীমান্ত পিলারের প্রায় ২০ গজ দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা সীমানায় নোম্যান্সল্যান্ডে জঙ্গলি গাছ ও লতাগুল্মপাতায় বেষ্টিত প্রায় অর্ধএকর জায়গা জুড়ে সেনারবাদী গণকবরের অবস্থান। আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দরের দক্ষিণ দিকে সীমান্ত সংলগ্ন সেনারবাদী গ্রাম। সীমান্তের ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিণ রামনগর গ্রাম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনারবাদী গ্রামটিতে পাকসেনারা সুদৃঢ় কোন অবস্থান নিতে পারেনি। ফলে আখাউড়া, গঙ্গাসাগর, কর্ণেল বাজার, গাজির বাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে যে যুদ্ধ হয়েছে সে সব যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সেনারবাদী কবরস্থানে কবর দেওয়া সম্ভব হয়। স্বাধীনতার পূর্ব সময়ে বাংলাদেশ এবং ভারত দু’দেশের লোকজনই এ কবরস্থানটিকে যৌথভাবে ব্যবহার করত। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের লাশ দাফন করায় পরবর্তীকালে এলাকাবাসী এ কবরস্থানটিকে আর ব্যবহার করেনি।
আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউপির সাবেক মেম্বার মুক্তিযাদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক নিজে সহায়তা করে অনেক মুক্তিযোদ্ধার লাশ সমাহিত করেছেন।
তিনি বলেন, নোম্যান্সল্যান্ডের সমাধিস্থলে মুক্তিযোদ্ধাদের যে লাশ কবর দেয়া হয়েছে তার সংখ্যা সব মিলিয়ে আড়াই’শর বেশি লাশের দাফন হয়েছে ওই গণকবরে। লাশ দাফনের সময় সহায়তা করেছেন মৃত আজিজুল হক আব্দু মেম্বার, আলী আহমেদ সরদার, আব্দু মেম্বারের প্রতিবেশি গিয়াস উদ্দিন ওরফে আরজু মিয়াও নিজ হাতে অনেক লাশ দাফন করেছেন বলে তিনি জানান।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পরবর্তী সময়ের শ্রমমন্ত্রী জহুর আহমেদ চৌধুরী ’৭৪ সালের শেষ দিকে সেনারবাদী গণকবর পরিদর্শন করে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার উদ্দ্যেশে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করার জন্য তৎকালীন ১০ হাজার টাকা অনুদান ঘোষণা করেছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর ওই গণকবরে শায়িত শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় আর কেউ এগিয়ে আসেনি।
দীর্ঘ দিন ধরে নোম্যান্সল্যান্ডে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা
২৫০ জন শহীদের গণকবর রক্ষা নতুন প্রজন্মকে জানান দেওয়ার জন্য দেশ ও জাতির বৃহৎ স্বার্থে আখাউড়া-আগরতলা নোম্যান্সল্যান্ড এলাকায় একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছে মুক্তিযাদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।