
মো, সাইফুল ইসলাম | মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ | 106 বার পঠিত | প্রিন্ট
আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ মাছ রপ্তানি অব্যাহত রয়েছে। গত তিনদিনে গেছে প্রায় ১৪ কোটি টাকার মাছ। সর্বশেষ মঙ্গলবার প্রায় ১৩০ মেট্রিক টন মাছ ভারতে যায়। যার মূল্য বাংলাদেশি টাকায় প্রায় তিন কোটি ৯০ টাকা লাখ।
স্থলবন্দর বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালুর দুই যুগেরও বেশি সময়ে সোমবার প্রায় রেকর্ড পরিমাণ পাঁচ কোটি টাকার বেশি মাছ যায় এ বন্দর দিয়ে। হঠাৎ মাছ রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় বন্দরের ব্যবসায়িরাও অনেকটাই অবাক হয়েছেন।
সোমবার সন্ধ্যায় সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা নাগাদ ২৯টি ছোট-বড় ট্রাকে করে হিমায়িত মাছ ভারতে যায়। মাছের মোট পরিমাণ এক লাখ ৭২ হাজার ৪৩৪ কেজি। অর্থাৎ ১৭২ টনেরও বেশি মাছ রপ্তানি হয়। প্রতি কেজি মাছ রপ্তানি হচ্ছে আড়াই ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশি প্রায় তিনশ’ টাকা কেজি দরে। সেই সেই হিসেবে সোমবার পাঁচ কোটি টাকার বেশি মাছ যায়। মাছের সিএন্ডএফ এজেন্ট ছিলো মিথু এন্টারপ্রাইজ। রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো বাবুল এন্টারপ্রাইজ।
এর আগে রবিবার মাছ গেছে প্রায় এক লাখ ৫২ হাজার ৫৩৪ কেজি। গত সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ১০০ টন করে মাছ রপ্তানি হয়। তবে নিয়মিত এ বন্দর দিয়ে ২০-৩০ টন মাছ ভারতে রপ্তানি হয়। অন্যান্য পণ্যের তুলনায় এখন মাছ রপ্তানি অনেক বেড়ে গেছে।
মঙ্গলবার রহমান ইমপেক্স এর নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৩০ মেট্রিক টন মাছ রপ্তানি করে। সিএন্ডএফ এজেন্ট ছিলো এফ এ এন্টারপ্রাইজ। রপ্তানি হওয়া এক লাখ ৩০ হাজার কেজি মাছের মূল্য তিন কোটি ৯০ লাখ ২৫ হাজার ২০০ টাকা।
বাংলাদেশের ব্যবসায়িরা বলছেন, দেশের কয়েকটি বন্দর দিয়ে ভারতে মাছ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। যে কারণে এ বন্দর দিয়ে মাছের চাহিদা বেড়ে গেছে, যা নিয়মিত চাহিদার তুলনায় আট-১০ গুণ। ওপারে ভারতের সাতটি রাজ্যে বাংলাদেশের মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে ব্যবসায়িরা জানান।
এদিকে গত সপ্তাহে সহকারি হাই কমিশন ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ঘটনায় ওপারে উত্তেজনা দেখা গেলেও এখন অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। তবে যাত্রী পারাপার অনেকটা কমে গেছে। যাওয়া-আসা করা যাত্রীদের মধ্যে ভারতীয়ই বেশি। অবশ্য ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশের সহকারি হাই কমিশন ভিসা সেবা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করায় ভারতীয় যাত্রীও ধীরে ধীরে কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারত আরো আগে থেকেই ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া বাংলাদেশি যাত্রী পারাপার অনেকদিন ধরেই কম।
চিন্ময় দাস গ্রেপ্তার ইস্যুসহ বিভিন্ন কারণে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি চলছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ভারতের ত্রিপুরাসহ বিভিন্নস্থানে নিয়মিত বিক্ষোভ হচ্ছে। সেদেশে বাংলাদেশি পতাকা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২ ডিসেম্বর ত্রিপুরাস্থ বাংলাদেশ সহকারি হাই কমিশনারের আগরতলার কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মিথ্যাচার করে পরিস্থিতিকে আরো বেশি উসকে দিয়েছে।
বন্দরের ব্যবসায়ি মো. হাসিবুল হাসান জানান, ওপারে বিভিন্ন কর্মসূচির কথা শুনা গেলেও রপ্তানিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ভারতীয়দের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, যদি পণ্য পাঠানো হয় তাহলে তারা সেটি গ্রহন করবেন। এ অবস্থায় এখন প্রচুর মাছ যাচ্ছে।
সিএন্ডএফ এজেন্ট মিথু এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারি নেসার উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘সোমবার রেকর্ড পরিমাণ মাছ ভারতে যায়। স্থলবন্দরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালু হওয়ার পর একদিনে এত বেশি মাছ যায়নি। দেশের বেশ কয়েকটি বন্দর দিয়ে রপ্তানি বন্ধ থাকা ও বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন ভালো হওয়ায় অনেক বেশি মাছ যাচ্ছে।’ তিনি জানান, লং মার্চ কর্মসূচির কারণে বুধবার বেলা ১২ নাগাদ মাছ রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। যে কারণে রপ্তানি কিছুটা কম হবে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান খান বলেন, ‘গত সপ্তাহ থেকে মাছ রপ্তানি অনেক বেড়ে গেছে। ওই সময়ে প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ মাছ ভারতে যায়। কয়েকটি বন্দরে রপ্তানি বন্ধ থাকায় এ পথে রপ্তানি বেড়েছে।’
Posted ৯:৩৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪
Akhaurar Alo 24 | মোঃ সাইফুল ইসলাম